রাঙামাটির বাসিন্দা রাজুময় দেওয়ান বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্য। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবানসহ সর্বত্র পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলায় এদের বসবাস। এদের সমাজে নিজ গোষ্ঠী এবং গোষ্ঠীর বাইরে বিবাহ প্রচলিত রয়েছে। পাত্রী পছন্দের ব্যাপারে অভিভাবকের মতকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়।
শহুরে সমাজে সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার সুযোগ তুলনামূলক কম।
বাংলাদেশের শহুরে সমাজ সাধারণত বৃহৎ এবং অধিক জনসংখ্যাবিশিষ্ট। ফলে সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার সুযোগ কম। শহরের মানুষেরা অত্যন্ত যান্ত্রিক ও কৃত্রিম প্রকৃতির হওয়ায় পারস্পরিক আলাপ তেমন হয় না। ফলে তাদের মধ্যে এক ধরনের সামাজিক দূরত্ব লক্ষ করা যায়।
উদ্দীপকে'?' চিহ্নিত স্থানে নির্দেশিত বিষয়টি হচ্ছে পরিবার। ক্ষমতার মাত্রার ভিত্তিতে বাংলাদেশে দু ধরনের পরিবারের অস্তিত্ব লক্ষণীয়। যথা- পিতৃপ্রধান ও সমতাভিত্তিক পরিবার। সহজ কথায়, এ দেশের পরিবার প্রধানত পিতৃপ্রধান। অর্থাৎ সমস্ত পরিবারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় পুরুষের অধিকার সর্বস্বীকৃত। তবে পিতৃপ্রধান পরিবারে নারীর মর্যাদা একেবারেই নেই এমন কথা বলা চলে না। এ বিষয়টি পরিবার থেকে পরিবারে পৃথক হতে পারে। অন্যদিকে, নগরাঞ্চলে উচ্চ শিক্ষিত ও উদার মনোভাবাপন্ন পরিবারে সমতার নীতি মেনে চলতে দেখা যায়। তবে এ দেশের প্রেক্ষাপটে এ ধরনের পরিবারের সংখ্যা নিতান্তই কম দেখা যায়।
উদ্দীপকের ছকে প্রদর্শিত উপাদানগুলোর ভিত্তিতে বাংলাদেশে যে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পরিচয় পাওয়া যায় তা হলো চাকমা নৃগোষ্ঠী।
চাকমা সমাজে আদামের নেতৃত্বে কারবারী, মৌজার নেতৃত্বে হেডম্যান এবং সার্কেলের নেতৃত্বে থাকেন রাজা। অবশ্য বর্তমানে এ ধরনের নেতৃত্ব ব্যবস্থায় কিছুটা পরিবর্তন সূচিত হয়েছে। তবে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক আনুষ্ঠানিকতা এখনও বিদ্যমান রয়েছে। আবার এটাও ঠিক যে, অনুরূপ রাজনৈতিক প্রশাসনিক কাঠামোর নেতৃত্ব ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।
আদাম বা পাড়া: কতকগুলো চাকমা পরিবার গুচ্ছ নিয়ে গঠিত হয় আদাম বা পাড়া। আদামের প্রধানকে বলা হয় কারবারী। চাকমা রাজা তাকে নিয়োগ করেন। তিনি আদামের শান্তিশৃঙ্খলা এবং সালিশ বিচার কার্যে মৌজা প্রধানকে সাহায্য করে থাকেন।
গ্রাম বা মৌজা: কতকগুলো চাকমা আদাম নিয়ে গঠিত হয় গ্রাম বা মৌজা। এর প্রধানকে বলা হয় হেডম্যান। চাকমা রাজার সুপারিশক্রমে ডেপুটি কমিশনার হেডম্যানকে নিযুক্ত করেন। হেডম্যান মৌজার শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করেন। খাজনা আদায় করার দায়িত্ব তার ওপর অর্পিত থাকে।
চাকমা সার্কেল: চাকমা সমাজের কয়েকশ মৌজা বা গ্রাম মিলে চাকমা সার্কেল গঠিত। এর প্রধান হচ্ছেন চাকমা রাজা। রাজা বংশ পরম্পরায় নিযুক্ত হন। চাকমা রীতি অনুযায়ী তিনি সমাজের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করেন। চাকমা রাজা চাকমা সমাজের প্রতীক।
তিনি সমগ্র চাকমা জনগোষ্ঠীর শ্রদ্ধা ও সম্মানের পাত্র।
কোচদের প্রধান উৎসবের মধ্যে হেমন্তকালে ধান রোপণ করার সময় 'গোচর পর্ণা', নতুন ফসল তোলার সময় 'লবণ খাওয়া' ও 'ধানের ফুল দেওয়া; পিতামাতার আত্মার কল্যাণ কামনায় 'কৈনা গৎ', পুত্র সন্তান লাভের আশায় ভাদ্র মাসের অষ্টম চাঁদে 'জিড়য়া' ও 'ভাদু' এবং চৈত্র-বৈশাখ মাসে বৃষ্টির কামনায় 'হুদুমা' ইত্যাদি প্রধান।
উদ্দীপকের রাজুময় দেওয়ান চাকমা নৃগোষ্ঠীর সদস্য। কেননা উদ্দীপকে উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যের সাথে চাকমা জনগোষ্ঠীর মিল রয়েছে। চাকমা পরিবার পিতৃতান্ত্রিক। এদের পারিবারিক ক্ষমতা স্বামীর হাতে বা বয়স্ক পুরুষের হাতে ন্যস্ত। পিতার বংশ পরিচয়ে ছেলেমেয়েদের পরিচয় এবং সম্পত্তির উত্তরাধিকারিত্ব নির্ণীত হয়। বিয়ের পর নারী তার স্বামীর গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। চাকমা সমাজে পিতার মৃত্যুর পর পুত্র সন্তানেরা সম্পত্তিতে সমান হারে মালিকানা পেয়ে থাকে। কিন্তু কন্যা সন্তানেরা পিতার সম্পত্তির কোনো অংশ পায় না। এরা মেয়েদেরকে অবহেলা করে না, পুত্র সন্তান না থাকলে সেক্ষেত্রে মেয়েরা পিতার সম্পত্তির মালিকানা পেয়ে থাকে। সামগ্রিকভাবে চাকমারা সাধারণত একক বিবাহভিত্তিক অণু পরিবারেই বসবাস করে। তাদের মাঝে যৌথ পরিবার বা বর্ধিত পরিবারের উদাহরণ খুবই বিরল।